ভারতবর্ষের বিভিন্ন আঞ্চলিক নিত্য | আঞ্চলিক নিত্য

Advertisements
আঞ্চলিক নিত্য

ভারতনাট্যমঃ

◼ভারতনাট্যম নৃত্যটি প্রায় দুই হাজার বছরের বেশি প্রাচীন।
◼এই নৃত্যশৈলীটি মূলত দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে উদ্ভূত।
◼ভরতমুনির ‘নাট্যশাস্ত্রে এবং নন্দিকেশরের ‘অভিনয় দর্পণ’ গ্রন্থে এই নৃত্যশৈলীর উল্লেখ রয়েছে।

☞ভারতনাট্যম নৃত্যশৈলীর প্রখ্যাত শিল্পীগণ হলেন :

মৃণালিনী সারাভাই, মল্লিকা সারাভাই,সােনাল মানসিংহ, রুক্মিনী দেবী,মীনাক্ষী সুন্দরম পিল্লাই, বালাসরস্বতী, লীলা স্যামসন, যামিনীকৃষ্ণমূর্তি, পদ্ম শুভ্ৰমনিয়াম, চিত্রাবিশ্বেশরন, লক্ষ্মী বিশ্বনাথ প্রমুখ।
 

কুচিপুড়িঃ

ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্যের এই শৈলীটি প্রাথমিকভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কুচিপুড়ি নামটি অন্ধ্রপ্রদেশের ‘কুশিলাভপুরি বা‘কুচিলাপূরম’ গ্রাম শব্দ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। ঐ গ্রামের একদল নৃত্যশিল্পী গ্রাম থেকে গ্রামে গিয়ে নৃত্য পরিবেশন করতেন যাদের বলা হয় ‘কুশীলব। সপ্তদশ শতকে সিদ্ধেন্দ্র যােগী এই প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বৈষ্ণব ধর্ম উদ্ভবের সাথে সাথে মন্দির কেন্দ্রিক পুরুষ ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া অধিকার প্রাপ্ত হয়েছিল এই নৃত্যশৈলীর উপরে। ভাগবত পুরাণের গল্পগুলি এর কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠেছিল, যা নৃত্যশিল্পীরা আবৃত্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলত। বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় ও চতুর্থ দশকে এই শৈলীর ভাবরসে সমৃদ্ধ আলাদা রীতি নৃত্য-নাটক উদ্ভূত হয়েছিল।

☞এই নৃত্যশৈলীর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল—

◼এটি একটি সমবেত নৃত্যশৈলী যার মধ্যে কঠিন পদসঞ্চার (পাঠুকা)লক্ষ্য করা যায়।
◼এই নৃত্যশৈলীর কথন অংশ ভাগবত ও পুরাণ গল্প সমৃদ্ধ হলেও তা ধর্মনিরপেক্ষ।

 

কুচিপুড়ি নৃত্যশৈলীর উল্লেখযােগ্য শিল্পীগণ হলেন :

রাজা রেড্ডি ও রাধা রেড্ডি,কৌশল্যা রেড্ডি, যামিনী রেড্ডি,ভেদাদন্তম সত্যনারায়ণ শর্মা,চায়না সত্যম, নির্মলা বিশ্বেশ্বরম রাও, জুনিয়র এন টি রামারাও, শান্তারাও, শােভা নাইডু, জি সরলা, বালা সরস্বতী, রাজারাম রাও, মানুষী চিল্লার প্রমুখগণ ।

 

কথাকলিঃ

এই শাস্ত্রীয় নৃত্যটি ভারতের কেরল রাজ্য থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। সামন্ত প্রভুদের পৃষ্ঠপােষকতায় রামায়ণ ও মহাভারত থেকে কাহিনী চয়ন করে কেরলের মন্দির সংলগ্ন যে দুটি নৃত্য নাট্যশৈলী লক্ষ্য করা যায় তা হল ‘রামানত্তম’ এবং ‘কৃষ্ণত্তম। এই লােকনৃত্যই হল কথাকলি নৃত্যের মূল উৎস। কথা’ শব্দটির অর্থ হল ‘গল্প’ এবং ‘কলি’ শব্দটির অর্থ হল ‘নাটক। এটি ‘কুদিয়াত্তমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।সামন্ত শাসনকার্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে এই নৃত্যশৈলীর জৌলুস কমে গিয়েছিল। ১৯৩০ সালের সময়কালে মুকুন্দ রাজার পৃষ্ঠপােষকতায় ভি ।এন মেননের দ্বারা এটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।

☞এই নৃত্যশৈলীর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল—

◼এটি মূলত পুরুষ শিল্পী দ্বারা উপস্থাপিত নৃত্যশৈলী।
◼কথাকলি আবৃত্তিতে সাজ-সরঞ্জামের ন্যূনতম ব্যবহার রয়েছে।

কথাকলি নৃত্যশৈলীর প্রখ্যাত শিল্পীগণ হলেন:

গুরু কুঞ্চ করুপ, গােপী নাথ, কোট্টাকালশিবরামন, রীতা গাঙ্গুলি, কলামণ্ডলমগােপীনাথ, কলামণ্ডল রমন কট্টিনায়ার,মুকুন্দরাজা, শান্তা রাও, উদয় শংকর, নায়ার প্রমুখ।

মোহিনীআট্টমঃ

এই নৃত্যের উৎপত্তি কেরল রাজ্যে। নৃত্যটি হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর মােহিনী রূপের সম্মানে নারীরা পরিবেশন করে থাকে। মােহিনী কথার অর্থ হল ‘সুন্দরী রমনী’ এবং ‘আট্টম’ শব্দের অর্থ হল নৃত্য। এটি মহিলা কর্তৃক পরিবেশিত একক নৃত্যশৈলী। এই নৃত্যটিতে ঐশ্বরিক প্রেমের স্বরূপ প্রকাশিত হয়। এই নৃত্যটি উনিশ শতকে ভাদিভেল কর্তৃক বিকশিত হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলার মতাে মােহিনীআট্টমও ব্রিটিশ নীতির কারণে বিস্মৃত হয়ে যায়। পরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ নীতির ফলস্বরূপ এই শাস্ত্রীয় নৃত্যের রূপটির পুনরুজ্জীবন দেখা গেছে।

☞এই নৃত্যশৈলীর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল—

◼মোহিনীআট্টম হল ভারতনাট্টমের লাবণ্য ও চমৎকারিত্ব এবং কথাকলির প্রাণশক্তির সম্মিলিত রূপ যেখানে পায়ের কার্য এবং পদসঞ্চারের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
◼এই নৃত্যশৈলীর মধ্য দিয়ে বিষ্ণুর নারীরূপের গল্প বর্ণিত হয়।

মোহিনীআট্টম নৃত্যশৈলীর প্রখ্যাত শিল্পীগণ হলেন:

ভাল্লাখােল নারায়ণ মেনন, কলামণ্ডল কল্যাণীকুট্টি আম্মা, কৃষ্ণা পানিক্কর,সুনন্দা নায়ার, জয়াপ্রদা মেনন,পল্লবী কৃষ্ণা, গােপীকা বর্মা,বিজয়লক্ষ্মী, রাধা দত্ত, স্মিতা রাজনস,ভারতী শিবাজী, কনক রেলে, মাধুরি আম্মা প্রমুখগণ।

 

ওডিশিঃ

ওডিশি হল ভারতের প্রাক বিখ্যাত শাস্ত্রীয় নৃত্যের এক শৈলী, যার উৎপত্তি হল পূর্ব উপকূলীয় রাজ্য ওডিশার হিন্দু মন্দির প্রাঙ্গন। এর তাত্ত্বিক ভিত্তি হল ভরতমুনির ‘নাট্যশাস্ত্র। নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত দক্ষিণ-পূর্ব নৃত্যশৈলী ‘ওধরা মগধ’ হল বর্তমান ওডিশা নৃত্যশৈলীর প্রাচীনতম পূর্বসুরী। পৃষ্ঠপােষকতায় ‘মহারিদের দ্বারা প্রাথমিকভাবে অনুশীলন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে বৈষ্ণব ধর্মের বিকাশের সাথে সাথে ‘মহাবি’ প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চার্লস ফ্যাব্রি এবং ইন্দ্রানী রেহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ওডিশি নৃত্যশৈলী যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

☞ ওডিশি নৃত্যশৈলীর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল—

◼এটি ‘মুদ্রা’ এবং আবেগ প্রকাশ করার ভঙ্গির ক্ষেত্রে ভারতনাট্যমের অনুরূপ।
◼এই নৃত্যশৈলীতে বৈষ্ণব ধর্মের থিম এবং হিন্দু দেবতা শিব ও সূর্যের সম্পর্কিত বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 ১৫ শতকে বৈষ্ণব সাধক শংকরদেব অসমে ‘সাত্রিয়া’ নামক আধুনিক শাস্ত্রীয় নৃত্য ‘সাত্রিয়ার প্রবর্তন করেছিলেন। এই শিল্পরূপটি বৈষ্ণব মঠ ‘সত্রাসে’র (Satras) নাম থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। সত্রাস’ নামটি ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্রে উল্লেখ পাওয়া গেছে। এটি ভক্তি আন্দোলন’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। অন্যান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যের মতাে ‘সাত্রিয়া’ নৃত্যশৈলীটি উৎপত্তির উষালগ্ন থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত একইরকম রয়েছে। তবে ‘ওজাপালি’, ‘বিহু’, ‘দেবদাসী’ প্রভৃতি লােকনৃত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

☞ সাত্রিয়া নৃত্যশৈলীর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য সমূহ-

◼এই নৃত্যশৈলী অসমে প্রচলিত ওজাপালি দেবদাসী লােক নৃত্যের সংমিশ্রিত রূপ।
◼সাত্রিয়া আবৃত্তির কেন্দ্রবিন্দু হল ভগবান বিষ্ণু সম্পর্কিত পৌরাণিক গল্প এবং ভক্তিমূলক নৃত্যরূপ উপস্থাপন।
◼সাত্রিয়া নৃত্যশৈলীর মধ্যে নৃত্তা’, ‘নাট্য এবং নৃত্য’ রূপ লক্ষ্য করা যায়।

সাত্রিয়া নৃত্যশৈলীর প্রখ্যাত শিল্পীগণ হলেন-

মনিরাম দত্ত, রােশেশ্বর সাইকিয়া, আনন্দমােহন ভগবতী, মহেশ্বর নিয়ােগ, কৃষ্ণাক্ষী কাশ্যপ প্রমুখ।

মনিপুরিঃ 

মনিপুরি নৃত্যশৈলীর উৎস খুঁজে পাওয়া যায় পৌরাণিক কালের শিব-পার্বতীর গান্ধর্ব নৃত্যের মধ্যে। তবে ১৫ শতকে বৈষ্ণব ধর্মের আবির্ভাবের সাথে সাথে এই নৃত্যের প্রাধান্যলাভ ঘটেছিল। তারপরে মহিলাদের দ্বারা পরিবেশিত এই নৃত্যের মূল বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে কৃষ্ণ। |আধুনিক যুগে অর্থাৎ অষ্টাদশ শতকে মনিপুরের রাজা ভাগচন্দ্রের পৃষ্ঠপােষকতায় এই নৃত্যশৈলীর উন্নতিলাভ ঘটেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে এই নৃত্যশৈলী প্রচলন করার ক্ষেত্রে প্রধান পুরােধা ছিলেন।

☞মনিপুরি নৃত্যশৈলীর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য সমূহ- 

◼এই নৃত্যশৈলীতে ভক্তির উপর অধিক জোর দেওয়া হয়। 
◼এই নৃত্যশৈলীর কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হল রাধা ও কৃষ্ণের প্রেম ও ভালােবাসার কাহিনী।
◼সংগীতশাস্ত্রে উল্লেখিত সমস্ত প্রযুক্তিগত উপাদান রাসলীলাতে পাওয়া যায়, যথা- নৃত্তা’, ‘নাট্য এবং নৃত্য। এছাড়া তাণ্ডব” এবং “লাস্য’ নামক দুটি স্বতন্ত্র বিভাগও লক্ষ্য করা যায়।

মনিপুরি নৃত্যশৈলীর প্রখ্যাত শিল্পীগণ হলেন:

গুরু বিপিন সিং, গুরু নীলেশ্বর মুখােপাধ্যায়, সবিতা মেহতা, রীতা দেবী, চারু থারুর, সাধনা বােস, সােহিনী রায়, রাজকুমার সিং, জিৎ সিং,দেবায়নী চালিয়া প্রমুখ।

কত্থকঃ

ব্রজভূমির রাসলীলা থেকে এর উৎস সন্ধান করে বলা যায় কত্থক হল উত্তরপ্রদেশের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যশৈলী। কত্থক শব্দটি “কথিকা’ শব্দ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, যারা মহাকাব্য, পৌরাণিক আখ্যান থেকে বিভিন্ন কাহিনী অঙ্গভঙ্গি ও সংগীতের সহিত পরিবেশন করতেন। ১৫ শতকে উত্তর ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের ধারা প্রবাহিত হয়েছিল।রাধা-কৃষ্ণ প্রেমনির্ভর এই ধারার আন্দোলনের কয়েকজন কুশীলব হলেন। মীরাবাঈ, সুরদাস, নন্দ দাস, কৃষ্ণদাস, প্রমুখগণ। ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্রের এই নৃত্যশৈলীর শিকড়গুলি প্রােথিত আছে। মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলারভরহুত’ গ্রামটি প্রাথমিকভাবে এই শিল্পকলার প্রতিনিধি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে প্রাপ্ত প্যানেলের নর্তকীদের চিত্রগুলিতে কত্থক নৃত্যভঙ্গির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

☞কত্থক নৃত্যশৈলীর কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল–

◼নৃত্য প্রদর্শনের সময় নর্তকীর শরীরের ভারসাম্য উলম্ব এবংঅনুভূমিকভাবে সমান সমান থাকে। এই পদ্ধতিটি পা চালানাের কৌশলের উপর নির্ভর করে নির্মিত হয়েছে।
◼নর্তকীর মঞ্চে প্রবেশ করার রীতিটিকে বলা হয় ‘আনন্দ। .
◼‘আনন্দের’ পরে মঞ্চে পরিবেশিত হয় ঠাট যা কোমলও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি আন্দোলনের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়।

কথক নৃত্যশৈলীর কয়েকজন শিল্পীগণ হলেন-

বিরজু মহারাজ, লাচু মহারাজ, শম্ভ মহারাজ, সীতারা দেবী, মােহন রাও, কাল্লিয়ান পুরকার, রিচা জৈন,মালবিকা মিত্র, মঞ্জুশ্রী চ্যাটার্জি, দময়ন্তী যােশী প্রমুখ

Our Service
Education service 93%
Advertisements

Leave a Comment

Advertisements
Button
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now