অসহযােগ আন্দোলন
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে গান্ধিজি অসহযােগ আন্দোলনের প্রস্তাব পেশ করেন এবং তা ভােটাধিক্যে গৃহীত হয়। এর পর কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনেও তা সমর্থিত হয়। এই অধিবেশনে গান্ধিজিকে আন্দোলন পরিচালনায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বয়ং গান্ধিজি ঘােষণা করেন যে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ যদি ভারতীয়দের প্রতি ন্যায়বিচার না করে, তাহলে প্রতিটি ভারতবাসীর কর্তব্য হবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে অগ্রাহ্য করা। এইভাবে গান্ধিজি হিন্দু মুসলিমঐক্যের ভিত্তিতে অহিংস অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেন।
আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যগুলি ছিল :
(১) দমনমূলক আইনগুলি, বিশেষভাবে কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিরােধিতা করা।
(২) জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানাে
(৩) খিলাফৎ সমস্যার যথাযথ সমাধানের দাবি জানানাে।
(৪) এক বছরের মধ্যে স্বরাজ অর্জন করা।
অসহযােগ আন্দোলনের কর্মসূচি :
বিভিন্ন দাবি পূরণ করার জন্য অসং বাগ আন্দোলনে গান্ধিজি ইতিবাচক ও নেতিবাচক এই দুই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন।অসহযােগ আন্দোলনের ইতিবাচক দিকগুলাে ছিল : (১)চরকা ও তাত দেশীয় সুতায় কাপড় বােনা। (২) অস্পৃশ্যতা দূর করা। (৩) পঞ্চায়েতরাজ প্রতিষ্ঠা।। (৪) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। (৫)এক কোটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন (৬) তিলক স্মৃতি তহবিলে এক কোটি টাকার তহবিল গঠন, প্রভৃতি।
অসহযােগ আন্দোলনের নেতিবাচক কর্মসূচির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযােগ্য ছিল (১)ব্রিটিশ সরকারের অফিস, আদালত প্রভৃতি বর্জন। (২) সমস্ত সরকারি উপাধি, খেতাব ও অনুষ্ঠান বর্জন করা। (৩) সরকারি স্কুল ও কলেজ বর্জন। (৪) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা বর্জন। (৫) বিদেশি বস্ত্র বর্জন। (৬) মদ্যপান বর্জন।
» » » সংক্ষেপে বলা যায় সম্পূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে সরকারের সঙ্গে অসহযােগিতা করে তাদের শাসন ব্যর্থ করে দেওয়াই ছিল গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযােগ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার : অসহযােগ আন্দোলনে গান্ধিজির আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র ভারতে এক অভাবনীয় আলােড়ন দেখা দেয়। জাতিধর্মনির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। মতিলাল নেহরু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, রাজাগােপালাচারী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ আইন ব্যাবসা ত্যাগ করে এই আন্দোলনে যােগদান করলেন। সুভাষচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করেন। মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে মহম্মদ আলি, সৌকত আলি, মৌলনা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখরা এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, উড়িষা, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বাংলা, গুজরাট প্রভৃতি প্রদেশের হাজার হাজার কৃষক ও শ্রমিক প্রবল উৎসাহের সঙ্গে এই আন্দোলনে যােগ দেয়। দলে দলে ছাত্ররা বিদ্যায়তন ত্যাগ করে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।এক কথায় বলা যায় অসহযােগ আন্দোলনের ফলে সরকারি অফিস, আদালত, আইনসভা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলাে কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও অসহযােগ আন্দোলনের প্রভাব পড়ে।
চৌরিচৌরার ঘটনা এবং অসহযােগ আন্দোলনের প্রত্যাহার :
আন্দোলন যখন প্রকৃত গণআন্দোলনেপরিণত হতে চলেছে ঠিক সেই মুহূর্তে, উত্তর প্রদেশের গােরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা থানায় উত্তেজিত জনতা থানা আক্রমণ করে। এই ঘটনায় ২২ জন পুলিশ নিহত হন। এই হিংসাত্মক ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে গান্ধিজি অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। গান্ধিজির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু প্রমুখ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন যে, অসহযােগ আন্দোলনের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ছিল “এক জাতীয় বিপর্যয়ের সমান”।অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহারের অপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে সারা ভারতে গান্ধিজির জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় এবং এই সুযােগে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আমাদের যদি কোন বানান ভুল হয়ে থাকে ক্ষমা করবেন, যদি কোথাও বানান ভুল আপনাদের মনে হয়ে থাকে , বা কোনো বাক্য ভুল মনে হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে সিটি জানাবেন ।
ধন্যবাদ
এরকম নতুন নতুন ইতিহাসের স্টাডি মেটেরিয়ালস ও অনান্য নোটস পেতে আমাদের মেনুতে ইতিহাস (History) পেজে যান এবং সেখানে সূচিপত্র হিসেবে বিভিন্ন স্টাডি মেটেরিয়ালস সাজানো রয়েছে আপনার যেটি প্রয়োজন সেটিতে ক্লিক করুন