নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুঃ
ভারতের মুক্তি আন্দোলন যেসব নেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব গুণে সাফল্য অর্জন করেছিল,
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তাদের মধ্যে সর্বোত্তম।
[১] কংগ্রেসে যােগদান :
ছােটোবেলা থেকেই সুভাষচন্দ্র ছিলেন স্বাদেশিকতার আদর্শে গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ। আই. সি. এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তিনি মর্যাদাপূর্ণ সরকারি চাকুরিতে যােগদান করেন নি, বরং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে সুভাষচন্দ্র দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন এবং কংগ্রেসে যােগ দেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কংগ্রেসের তরুণ ও বামপন্থী মহলে জনপ্রিয়তার সুবাদে ১৯৩৮ সালে তিনি হরিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতি মনােনীত হন। এর পর ১৯৩৯ সালে গান্ধিজির বিরােধিতা সত্ত্বেও তিনি ত্রিপুরী কংগ্রেসে কংগ্রেস সভাপতি হন। কিন্তু এই অধিবেশনের পরবর্তী সময়ে গান্ধি গােষ্ঠীর সঙ্গে মতবিরােধের ফলশ্রুতিতে
সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ত্যাগ করে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন (মে ১৯৩৯) ।
[২] দেশত্যাগ :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানতে চাইলেন। এই উদ্দেশ্যে শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’—এই নীতি অনুসরণ করে তিনি বাইরে থেকে ব্রিটিশ
শক্তিকে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ শাসকদের সমস্ত সতর্কতাকে ব্যর্থ করে তিনি কাবুলের পথে পাড়ি দেন ও কাবুল থেকে রাশিয়া হয়ে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে পৌঁছান। জার্মানিতে পৌছে তিনি ব্রিটিশ বিরােধী প্রচার শুরু করেন, কিন্তু জার্মানি থেকে ভারতে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে তিনি জাপানের সমর্থনে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেন।
[৩] আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠা :
বিপ্লবী মহানায়ক রাসবিহারী বসুর আহ্বানে সুভাষচন্দ্র ডুবাে জাহাজে করে জার্মানি থেকে জাপানে আসেন (১৩ই জুন, ১৯৪৩)। জাপানে এসে তিনি আজাদহিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সশস্ত্র
সংগ্রাম পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব নেন। এর পর সুভাষচন্দ্র আজাদ- হিন্দ বাহিনীর পুনর্গঠন করেন এবং সেনাবাহিনীর উন্নতি ও শৃঙ্খলা আনার ব্যাপারে সচেষ্ট হন। আজাদ-হিন্দ বাহিনীর সৈন্যরা তাকে
‘নেতাজি’আখ্যায় ভূষিত করেন। সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ ফৌজকে পাঁচটি ব্রিগেডে ভাগ করেন, এগুলি হল : গান্ধি ব্রিগেড, সুভাষ ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড ও ঝাঁসির রানি বাহিনী।
[৪]সরকার গঠন :
পরবর্তী সময়ে নেতাজি আইরীশ অস্থায়ী সরকারের অনুকরণে আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন (২১ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অক্টোবর ১৯৪৩) অস্থায়ী এই সরকারের মূলমন্ত্র ছিল ‘জয় হিন্দ’ও ‘দিল্লি চলল। জাপান,জার্মানি এবং ইটালি সমেত আটটি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি জানায়। সুভাষচন্দ্র হলেন এইসরকারের কর্ণধার ও প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, সমর সচিব ও প্রধান সেনাপতি। এই সময়ে
নেতাজি জাপানি বেতার থেকে ভারতের স্বাধীনতার বাণী প্রচার করেন। তিনি বলেন, ‘দিল্লির এই হল স্বাধীনতার পথ’। তার চরম আহ্বান ছিল-“তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” (Give me blood, I will give you freedom)
[৫]অভিযান :
এর পর শুরু হয় আজাদ হিন্দ বাহিনীর সশস্ত্র ভারত অভিযান। নেতাজির রণধ্বনি দিল্লি চলাে’ ও ‘জয় হিন্দ’মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের পূর্ব সীমান্তে এসে পোঁছাল। ইতিমধ্যে নেতাজি জাপানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দামান ও নিকোবর পুঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণ করে সেখানে ত্রিবর্ণ পতাকা উড়িয়ে দিয়ে দ্বীপগুলাের নতুন নাম রাখেন শহিদ ও স্বরাজ দ্বীপ। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্ৰহ্বদেশ পার হয়ে মণিপুর রাজ্যে প্রবেশ করে। বাহিনীর একটি অংশ কোহিমা দখল করে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল এধিকারের জন্য অগ্রসর হল। ইতিমধ্যে প্রবল বর্ষা শুরু হওয়ায় আজাদ হিন্দ বাহিনীর যােগাযােগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর আঘাতে জাপান বিধ্বস্ত হয়ে জাপানের সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রিটিশের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। মাঞ্ছুরিয়া যাবার পথে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির সম্ভৱত মৃত্যু হয় আগস্ট ১৯৪৫), অবশ্য এই মৃত্যুর কাহিনি অনেকেই সত্যি বলে মনে করেন না ‘
Subscribe For Update
Stay up to date with the latest information for competitive examination