ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভূপ্রকৃতির মধ্যে উত্তরের পার্বত্য ভূপ্রকৃতি একটি অন্যতম ভূপ্রকৃতি । এই উত্তরের ভূপ্রকৃতির একটি অন্যতম পর্বত হল হিমালয় পর্বত । এটা একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বত । বর্তমানে এর অবস্থান ভারতের উত্তরাংশে নাঙ্গা পর্বত (জম্মু কাশ্মীর) থেকে নামজাবাড়ুয়া (অরুণাচল প্রদেশ) পর্যন্ত । এই পর্বতের অবস্থান ভারতের জনজীবনে নানা রকম প্রভাব ফেলে এই প্রভাব গুলি হল-
জলবায়ুগত প্রভাবঃ
- তীব্র ঠান্ডা থেকে রক্ষাঃ হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তর পূর্বদিকে প্রাচীরের মতো দন্ডায়মান । এর ফলে শীতকালে মধ্যশিয়ার তীব্র ঠান্ডা বায়ুকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দেয় । । এই জন্য ভারতবর্ষ তীব্র ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায় ।
- জলবায়ুঃ ভারতবর্ষের জলবায়ু মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত । হিমালয় পর্বত উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রাচীরের মতো দন্ডায়মান থাকায় ভারতবর্ষে তীব্র ঠান্ডা বায়ু প্রবেশ করতে পারেনা ফলে ভারতবর্ষের মৌসুমী জলবায়ু বিরাজ করে । হিমালয় না থাকলে ভারত বর্ষমৌসুমী জলবায়ুর পরিবর্তে ভারতবর্ষ তীব্র শীতল জলবায়ুতে পরিণত হতো ।
বৃষ্টিপাতঃ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতবর্ষে প্রবাহিত হওয়ার সময় হিমালয় পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হিমালয় পর্বতের বাধা প্রাপ্ত হয়ে উপরে উঠে মেঘে পরিণত হয় এবং পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায় যা ভারতবর্ষে বৃষ্টিপাতের সামঞ্জস্য বজায় রাখে ।
ভূমিরূপগত প্রভাব
- নদনদীর উৎসস্থল: সুউচ্চ হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ থেকে গঙ্গা, যমুনা, তিস্তা প্রভৃতি বহু বরফগলা জলে পুষ্ট নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এইসব নদী পার্বত্য প্রবাহে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ গঠন করেছে, যেমন-গিরিখাত, জলপ্রপাত প্রভৃতি।
- বিস্তৃত সমভূমি গঠন:
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে পলি বয়ে এনে নদীগুলি উত্তর ভারতে বিস্তীর্ণ উর্বর সমভূমির সৃষ্টি করেছে। ফলে এই সমভূমি অঞ্চলে কৃষিকার্য ও পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখানে জনবসতির ঘনত্ব বেশি।
অর্থনৈতিক প্রভাব
- জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি খরস্রোতা এবং সারাবছর বরফগলা জল পায় বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী।
- বনজসম্পদ উৎপাদন: পশ্চিম হিমালয়ের বিক্ষিপ্ত অল্পবিস্তৃত তৃণভূমিগুলি মেষপালন এবং বিস্তীর্ণ সরলবর্গীয় অরণ্যগুলি কাষ্ঠ সম্পদ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
- ভেষজ উদ্ভিদ সম্পদ উৎপাদন: পার্বত্য ঢালে প্রচুর পরিমাণে ভেষজ উদ্ভিদ, চা, সিঙ্কোনা এবং বিভিন্ন ফল (আপেল, কমলালেবু প্রভৃতি) উৎপন্ন হয়।
- সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি শিল্পের উন্নতি: এখানকার জলবায়ু সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি (যেমন-ঘড়ি), শাল, কার্পেট, সূক্ষ্ম কারুশিল্প ও মৃৎশিল্পের উন্নতির পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী।
- পর্যটন শিল্পের বিকাশ: হিমালয়ের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন, যা হোটেল শিল্প তথা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে।
সাংস্কৃতিক প্রভাব
- বৈচিত্র্যপূর্ণ সামাজিক গোষ্ঠীর আবাসস্থল: পার্বত্য অঞ্চলে পৃথক পৃথক সামাজিক গোষ্ঠী বসবাস করে। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব ঐতিহ্যবিশিষ্ট সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
- বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা: প্রাচীনকাল থেকেই হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতো অবস্থান করে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ভারতকে রক্ষা করে এসেছে (কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া), যা ভারতের নিজস্ব সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।