Higher Secondary:নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত এর জীবন চক্র সম্পর্কে বর্ণনা, উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল

Advertisements
Advertisements
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল

নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র , উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন , বা যে কোন পরীক্ষায় নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন নেয়া হয়, Higher Secondary Exam এ এই প্রশ্নটি একাধিক বার এসেছে , তাই আজকে আমাদের এই প্রতিবেদনটি নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবন চক্র সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো। পুরো বর্ণনার পিডিএফ নিচে রয়েছে , তোমরা পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে পিডিএফটি ডাউনলোড করে নাও 

নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত জীবন চক্রের সাথে সাথে  আরো কিছু প্রশ্ন এখানে উত্তর রয়েছে – 

অন্তর্লীন বা অকুসান কাকে বলে?

ফ্রন্টোলিসিস বলতে কী বোঝায়?

1918 সালে নরওয়েজীয় আবহবিদ বিলহে- বার্কনেস, জেকব বার্কনেস এবং এইচঙ সোলবার্গ নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ও বিকাশে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য মেরুসীমান্ত তত্ত্ব প্রবর্তন করেন, যাতে 6টি পর্যায় আছে।

A. প্রারম্ভিক পর্যায় (Initial Stage):

1. প্রথমে মেরু অঞ্চলথেকে শীতল, শুষ্ক ও ভারী মেরু বায়ুপুঞ্জ এবং ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে উয়, আর্দ্র ও হালকা উপক্রান্তীয় পশ্চিমা বায়ুপুঞ্জ নাতিশীতোয় মণ্ডলে মুখোমুখি হয়।

2. বায়ুপুঞ্জ দুটি পরস্পরের সমান্তরালে বিপরীত দিকে অর্থাৎ মেরুবায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং পশ্চিমা বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়।

3. বায়ুপুঞ্জ দুটি খুব কাছাকাছি এলেও ভিন্ন উয়তা, আর্দ্রতা ও ওজনের জন্য পরস্পর না মিশে এক অদৃশ্য ঢালু সীমানা বা প্রাচীর বরাবর একে অন্যের থেকে পৃথক থেকে যায়। উত্তরে মেরু বায়ুপুঞ্জ এবং দক্ষিণে পশ্চিমা বায়ুপুঞ্জ থাকে। একে বায়ুপ্রাচীর বা সীমান্ত (Front) বলে। সীমান্ত গঠনের প্রক্রিয়াকে ফ্রন্টোজেনেসিস বলে।

4. প্রারম্ভিক পর্যায়ে সীমান্ত বরাবর দুই বিপরীতধর্মী বায়ুপুঞ্জের মধ্যে খুব মৃদু আলোড়ন শুরু হয়, কিন্তু বায়ুর উল্লম্ব স্থানান্তর ঘটে না, সীমান্ত একই জায়গায় স্থির থাকে। তাই এই সীমান্তকে স্থির/সাম্য সীমান্ত বলে।

B. জন্মলাভ/সদ্যোজাত পর্যায় (Incipient Stage):

1. দ্বিতীয় পর্যায়ে পর্বতের অবস্থান বা বায়ুচাপ ঢালের পরিবর্তন বা উত্তর গোলার্ধের মেরু বায়ুপুঞ্জ শীতল, ভারী ও অধিক গতিশীল হওয়ায় দিক পালটে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হতে থাকে ও গোঁজের মতো অবতল আকৃতির বাঁক নিয়ে পশ্চিমা বায়ুপুঞ্জে প্রবেশ করে। 2. এর ফলে উয় হালকা ও সক্রিয় পশ্চিমা বায়ু ধাক্কা খেয়ে সংকুচিত হয় এবং দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হতে থাকে ও উত্তল আকৃতির বাঁক নিয়ে মেরু বায়ুপুঞ্জে প্রবেশ করে।

3. বায়ুপুঞ্জ দুটি একে অন্যের স্থান দখল করতে থাকায় সাম্য সীমান্তের বিস্তার ও অস্থিরতা উন্ন বায়ুপুঞ্জের দিকে বৃদ্ধি পেয়ে তরঙ্গ সীমান্ত (Wave Front) সৃষ্টি হয়। 4. দুই ধরনের তরঙ্গ

সীমান্ত গড়ে ওঠে- (a) উয় বায়ুপুঞ্জের সামনে উত্তল ও মৃদু ঢালু উয় সীমান্ত (Warm Front) এবং (b) শীতল বায়ুপুঞ্জের সামনে অবতল ও খাড়া ঢালু শীতল সীমান্ত (Cold Front)

5. উয় ও শীতল সীমান্তের মিলন বিন্দু অর্থাৎ নিম্নচাপ কেন্দ্রে তরঙ্গশীর্ষ অবস্থান করে এবং সেখানে প্রথম বায়ুর ঘূর্ণন তথা ঘূর্ণবাত শুরু হয়। একে সাইক্লোজেনেসিস বলে।

C. প্রাথমিক পরিণত পর্যায় (Early Mature Stage):

1. এইসময়ে তরঙ্গ সীমান্তের বক্রতা ও বিস্তার লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে সীমান্ত বরাবর প্রবল আলোড়ন শুরু হয়।

2. উয়-ক্ষেত্র থেকে শীতল ক্ষেত্রের দিকে বায়ুপ্রবাহ শুরু হয়ে ঘূর্ণবাতের প্রাবল্য বৃদ্ধি পায়।

3. শীতল ও ভারী মেরুবায়ুপুঞ্জ মাটি ঘেঁষে উন্ন ও হালকা পশ্চিমা বায়ুপুঞ্জকে দ্রুত সরায়, কিন্তু উয় বায়ুপুঞ্জটি শীতল বায়ুপুঞ্জকে দ্রুত সরিয়ে অগ্রসর হতে পারে না। ফলে উন্ন সীমান্ত অতি ধীরে এবং শীতল সীমান্ত অতি দ্রুত অগ্রসর হওয়ায়, উয় ক্ষেত্রটি সংকীর্ণতর ও শীতল ক্ষেত্রটি প্রশস্ততর হতে থাকে। শীতল সীমান্ত উয় সীমান্তের নিকটতর হয়। তরঙ্গ সীমান্তের বাঁক বৃদ্ধি পেয়ে তরঙ্গশীর্ষ ওপরে তীক্ষ্ণ আকারে উঠে যায়।

D. সম্পূর্ণ পরিণত পর্যায় (Full Mature Stage):

1. চতুর্থ পর্যায়ে অতি দ্রুত অগ্রসরমান শীতল সীমান্ত উয়ক্ষেত্রকেসংকীর্ণতম করে, তবে ঘূর্ণবাত উয় ও শীতল এই দুই ক্ষেত্রে সুস্পষ্টরূপে বিভক্ত থাকে।

2. উয় ও আর্দ্র বায়ু শীতল বায়ুর ওপর উঠে এসে তা চারপাশে ঠান্ডা বায়ু দ্বারা অবরুদ্ধ ও ঘনীভূত হয়ে মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তবে শীতল সীমান্তের তুলনায় উয় সীমান্তের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বজ্রবিদ্যুৎসহ মুষলধারে বর্ষণ ঘটে।

3. তরঙ্গ সীমান্তের বিস্তার ও বক্রতা সর্বাধিক হয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রবলতম হয়, সর্বত্র সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হতে থাকে এবং ঘূর্ণবাত সম্পূর্ণ বিকশিত হয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে।

4. অবশেষে শীতল সীমান্ত তরঙ্গ সীমান্তের শীর্ষ বিন্দুর কাছে উয় সীমান্তকে নাগালের মধ্যে পেয়ে যায়।

 

E. অন্তর্লীন পর্যায় (Occluded Stage):

1. এই সময়ে অতি দ্রুতগামী সমগ্র শীতল সীমান্ত ধীর গতি সম্পন্ন সমগ্র উন্ন সীমান্তকে স্পর্শ করে ও উভয়ে মিলিত হয়ে একটি মাত্র অভিন্ন সীমান্তে পরিণত হয়। একে অন্তর্লীন বা অন্তর্ভূত সীমান্ত (Occluded Front) বলে। এই প্রক্রিয়াটিকে অন্তর্লীন বলে। অন্তর্লীন অবস্থা তরঙ্গ সীমান্তের শীর্ষ থেকে শুরু হয়ে ক্রমান্বয়ে নীচের দিকে অগ্রসর হয় এবং উয় ও শীতল সীমান্তের মধ্যে কোনো ফাঁক থাকে না।

2. উয় ক্ষেত্রের উন্ন বায়ু সংকুচিত হয়ে উপরে উঠে যায়, শীতল বায়ু দ্বারা বেষ্টিত থাকে এবং ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

3. মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত হ্রাস পায়।

 

F. সমাপ্তি পর্যায় (End Stage):

1. অবশেষে শীতলবায়ু সমগ্রঅঞ্চলটিকে অধিকার করে ও তার মধ্যে উয় বায়ুর এক দুর্বল ঘূর্ণি থাকে।

2. ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ শক্তির জোগান বন্ধ হয়ে উল্লবায়ু শীতলবায়ুর মধ্যে অন্তর্হিত হয়। অন্তর্লীন সীমান্ত নিশ্চিহ্ন হয়। একে ফ্রন্টোলিসিস বলে।

3. বৃষ্টি, ঝড়, বজ্রপাত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়।

Leave a Comment

Button
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now