👉 সংবিধান সংশােধনের প্রয়োজনীয়তা (Necessity) :
যে কোনাে দেশের সংবিধান একটি বিশেষ সময় ও পরিস্থিতিতে প্রণীত হয়। এক বিশেষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতার ভিত্তিতে সংবিধান রচিত হয়। কিন্তু সময় ও সমাজ গতিশীল ও পরিবর্তনশীল। তাই সময় ও পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে কোনাে দেশের সংবিধানেরও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
👉বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় (Political Systems) বিভিন্ন সংবিধান সংশােধনের পদ্ধতি:
উত্তর। সংবিধান সংশােধনের পদ্ধতি সকল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একরকম হয় না। দেশের সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় কাঠামাের ওপর সংশােধন পদ্ধতির প্রকৃতি বহুলাংশে নির্ভরশীল।যেমন—এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় সংবিধান সংশােধনের পদ্ধতি নমনীয় হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের সংশােধন পদ্ধতির সঙ্গে অঙ্গরাজ্যগুলিকে যুক্ত করতে হয়।
👉সংবিধান সংশােধনের ক্ষেত্রে ভারতের সংবিধান প্রণেতাগণের(Makers) অভিমতটি (Opinion) কি ছিল?
ভারতীয় সংবিধানের রচয়িতারা দেশের সংবিধানের গতিশীলতা সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক ছিলেন।জনসাধারণের সংবিধান সংশােধনের অধিকার আছে। এই অধিকারকে অস্বীকার করা যায় না। অন্যদিকে পণ্ডিত নেহরু গণপরিষদে বলেন যে, সংবিধানকে স্থায়ী ও দুষ্পরিবর্তনীয় করার অর্থ জাতির অগ্রগতিকে রুদ্ধ করা।
👉ভারতীয় সংবিধানের 368 নং ধারা অনুসারে সংবিধান সংশােধনের (Amendment) প্রথম পদ্ধতি:
ভারতীয় সংবিধানের ৩৬৮নং ধারার প্রথম পদ্ধতি অনুসারে সংবিধান সংশােধনের যে কোন প্রস্তাব পার্লামেন্টের যে কোনাে কক্ষে পৃথকভাবে উত্থাপন করা যায়। এখানে সংবিধান সংশােধনের প্রস্তাব একটি বিল আকারে উত্থাপন করতে হয়।প্রস্তাবটি উভয়কক্ষে পৃথকভাবে মােট সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের দ্বারা সমর্থিত হওয়া দরকার। এরপর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরলাভে প্রস্তাব অনুসারে সংবিধান সংশােধিত হয়।
👉ভারতীয় সংবিধানের 368নং ধারায় বর্ণিত সংবিধানসংশােধনের দ্বিতীয় পদ্ধতি:
৩৬৮ নং ধারায় উল্লিখিত সংবিধান সংশােধনের দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অপেক্ষাকৃত জটিল। এই পদ্ধতি অনুসারে সংশােধনীপ্রস্তাবনাটি প্রথম পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে প্রথম পদ্ধতি অনুসারে পাস হওয়া প্রয়ােজন। তারপর তা অন্তত অর্ধেক রাজ্য আইনসভার দ্বারা অনুমােদিত হওয়া দরকার। এভাবে অনুমােদিত হবার পর উক্ত সংশােধনী বিলটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য তার কাছে পাঠানাে হয়।
👉 ভারতীয় সংবিধানের প্রথম পদ্ধতি অনুসারে সংবিধানের কোন্ কোন্ অংশের সংশােধন করা যায় ?
ভারতীয় সংবিধান সংশােধনের প্রথম পদ্ধতি অনুসারে সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের মৌলিক অধিকার, চতুর্থ অধ্যায়ের নির্দেশমূলক নীতি প্রভৃতি সংবিধানের প্রায় আশিভাগ ধারা পরিবর্তন করা যায়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের রাজন্য ভাতা বিলােপ সংক্রান্ত সংশােধনী বিল এই পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।
👉ভারতীয় সংবিধান সংশােধনের দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসারে সংবিধানের কোন্ কোন্ অংশের সংশােধন করা যায়?
কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতার বণ্টন, কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসনবিভাগের ক্ষমতার বিস্তৃতি,রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, সুপ্রীমকোর্ট এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও
অঙ্গরাজ্যসমূহের হাইকোর্ট সম্পর্কিত বিষয়, সংবিধান সংশােধন প্রভৃতি বিষয়গুলি সংশােধনের জন্য দ্বিতীয় পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ
করা হয়ে থাকে।
👉 ভারতীয় সংবিধান সংশােধনের ক্ষেত্রে তৃতীয় পদ্ধতি:
ভারতীয় সংবিধান সংশােধনের তৃতীয় পদ্ধতিটি অত্যন্ত সরল। এক্ষেত্রে কোনাে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় না।সাধারণ আইন প্রণয়নের পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে এক্ষেত্রে সংবিধান সংশােধন করা যায়।নতুন রাজ্যের সৃষ্টি বা রাজ্য পুনর্গঠন, বিধান পরিষদের সৃষ্টি বা বিলােপসাধন। সরকারী ভাষা প্রভৃতি বিষয়গুলি এই পদ্ধতির মাধ্যমে সংশােধন করা যায়।
👉 প্রথম সংশােধনটির দ্বারা ভারতীয় সংবিধানের কি কি পরিবর্তন (Changes) সাধিত হয়েছিল?
১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ভারতীয় সংবিধানের প্রথম সংশােধনী আইনটি প্রণীত হয়। এই সংশােধনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কতকগুলি পরিবর্তন কার্যকর হয়। যেমন ১৫(৪) নং ধারা সৃষ্টি করে সামাজিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে অনগ্রসর তফশিলী জাতি ও উপজাতিদের উন্নয়নের স্বার্থে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়। এছাড়া ১৯নং ধারায় উল্লিখিত স্বাধীনতার অধিকারের ওপর কতকগুলি বাধানিষেধ আরােপ করা হয়।
👉 ভারতীয় সংবিধানের দ্বিতীয় সংশােধনটির বিষয়বস্তুগুলি :
ভারতীয় সংবিধানের দ্বিতীয় সংশােধনী আইন প্রণীত হয় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে। এই সংশােধনের মাধ্যমে ৮১নং ধারার কিছু পরিবর্তন করা হয় এবং বলা হয় যে, লােকসভার সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত লক্ষের কম বা বেশী অধিবাসীপিছু একজন সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন। উল্লেখ্য মূল সংবিধানের বিধান অনুসারে সাড়ে সাত লক্ষ অধিবাসীপিছু একজন করে সদস্য লােকসভায় নির্বাচিত হতে পারতেন।
👉 ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চম সংশােধনটির বিষয়বস্তু:
ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চম সংবিধান সংশােধনী আইন ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রণীত হয়। এই সংশােধনের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের ৩নং ধারার আংশিক পরিবর্তন করা
হয়। উক্ত সংবিধানের মাধ্যমে বলা হয় যে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ‘নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রাজ্যগুলিকে রাজ্য পুনর্গঠনের বিষয়ে নিজেদের মতামত জানাতে হবে।
👉 ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ সংশােধনটির বিষয়বস্তু:
চতুর্থ সংবিধান সংশােধনী আইন ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে অনুমােদিত হয়। এই সংশােধনে ভারতীয় সংবিধানের ৩৩৪নং ধারার পরিবর্তন করা হয়। তার ফলে তফশিলী জাতি, উপজাতি এবং ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের জন্য লােকসভায় ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে আসন সংরক্ষণের মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়ানাে হয় এবং করা হয় ২০ বছর।
👉 ভারতীয় সংবিধানের 16তম সংশােধনটির বিষয়বস্তু:
ষােড়শ সংবিধান সংশােধনী আইনটি পাস হয় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে। এই সংশােধনের মাধ্যমে সংবিধানের ৩য় তফশিলের পরিবর্তন করা হয়। ভারতের সার্বভৌমিকতা ও অখণ্ডতার স্বার্থে স্বাধীনতার অধিকারের ওপর যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরােপের ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয় এবং ১৯নং ধারার পরিবর্তন করা হয়।
👉 ভারতীয় সংবিধানের 24তম সংশােধনটির বিষয়বস্তু:
ভারতীয় সংবিধানের ২৪তম সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে সংবিধানে ১৩নং ও ৩৬৮নং ধারার পরিবর্তন করা হয়।বলা হয় পার্লামেন্ট মৌলিক অধিকারসহ সংবিধানের যে কোনাে
অংশ সংশােধন করতে পারবে এবং রাষ্ট্রপতি সংবিধান সংশােধনী বিলে সম্মতি দিতে বাধ্য থাকবেন। উল্লেখ্য গােলকনাথ মামলায়। পার্লামেন্টের ক্ষমতার ওপর যে সীমাবদ্ধতা আরােপিত হয়েছিল তা দূর করতেই উক্ত সংবিধান সংশােধিত আইন প্রণীত হয়।
👉ভারতীয় সংবিধানের 25তম সংশােধনটির দ্বারা সংবিধানে কি পরিবর্তন করা হয়েছিল?
উত্তর। ২৫তম সংশােধনের দ্বারা ভারতীয় সংবিধানে ৩১(২)নং ধারার পরিবর্তন করা হয় এবং উক্ত ধারায় ক্ষতিপূরণ(Compensation) শব্দটির পরিবর্তে পরিমাণ (Amount)
শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া উক্ত সংশােধনের মধ্য দিয়ে ৩১(গ) নং অংশটি সংযুক্ত করা হয়। ইহা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সাধিত হয়।
👉 ভারতীয় সংবিধানের 42তম সংশােধনটির গুরুত্ব:
উত্তর। ৪২তম সংশােধন ভারতীয় সংবিধানের ইতিহাসে এক বিতর্কিত অধ্যায়ের সূচনা করে। এই সংশােধনী আইনে ৫৯টি ধারা রয়েছে। এই সংশােধনের মাধ্যমে প্রস্তাবনার পরিবর্তন, নির্দেশমূলক নীতিগুলির গুরুত্বসাধন, নাগরিকদের ১০টি মৌলিক কর্তব্যের
উল্লেখ, সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতার পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পন্ন করা হয়।সংবিধানের প্রভাবনায় সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ’—এই শব্দ
দুটি সংযুক্ত করা হয়। ইহা ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সাধিত হয়।
👉ভারতীয় সংবিধানের 73তম সংশােধনটির বিষয়বস্তু:
৭৩ তম সংবিধান সংশােধনী আইনটি প্রণীত হয় ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২০শে এপ্রিল। আলােচ্য সংশােধনী আইটিতে সংবিধানের অষ্টম অংশের (Part – VIII) পর নবম অংশ (Pat-IX)-টি সংযুক্ত হয়। উক্ত সংশােধনটিতে যে সমস্ত বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয় তা হল—‘পঞ্চায়েত সম্পর্কিত যেমন-পঞ্চায়েতের গঠন, পঞ্চায়েতের কার্যকাল, পঞ্চায়েতের সদস্যদের যােগ্যতা, পঞ্চায়েতের ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, দায়িত্ব ইত্যাদি।
👉ভারতীয় সংবিধানের 74তম সংশােধনটির বিষয়বস্তুগু :
৭৪তম সংবিধান সংশােধনী আইনটি ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের২০শে এপ্রিল প্রণীত হয়। আলােচ্য সংবিধান সংশােধনী আইনটিতে ভারতীয় সংবিধানের নবম অংশের (Part-IX) পর
নবম অংশ (ক) [(Part – IX – (A) সংযুক্ত করা হয়। সংযুক্ত এই নতুন অংশটিতে মিউনিসিপ্যালিটির গঠন, মিউনিসিপ্যালিটির কার্যকাল, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, দায়িত্বসমূহ ইত্যাদি বর্ণিত হয়ে থাকে।
👉ভারতীয় সংবিধানের 76তম সংশােধনটি লেখ
উত্তর। ভারতীয় সংবিধানে এই সংশােধনটি রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে এবং ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে আগস্ট কার্যকর হয়। এই আইনটির মাধ্যমে নবম তফশিলে একটি বিষয় যুক্ত করা
👉ভারতীয় সংবিধানের 78তম সংশােধনটি লেখ।
এই সংবিধান সংশােধনী আইনটির মাধ্যমে সংবিধানের নবম তালিকা সংশােধনের ব্যবস্থা করা হয়। নবম তালিকার অন্তর্ভুক্ত ২৫৭-২৮৪নং ক্রমিক সংখ্যাভুক্ত বিষয়গুলিকে যথাযথভাবে
বিন্যস্ত করার জন্য এই সংশােধন সম্পাদিত হয়।
👉 সংবিধান রচয়িতাদের উদ্দেশ্য (Purpose) কি ছিল?
সংবিধান রচয়িতাদের উদ্দেশ্য ছিল দ্বিবিধ। যথা-ভারতের শাসনব্যবস্থার যুক্তরাষ্ট্র কাঠামাে বজায় রাখা এবং সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের প্রয়ােজনীয় গতিশীলতা রক্ষা করা।
👉কি কি উপায়ে সংবিধানের গতিশীলতা (Dynamic character) রক্ষা করা যায়?
শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, বিচারবিভাগীয় ভাষ্য, প্রশাসনিক আদেশ-নির্দেশ, আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন এবং সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে সংবিধানের গতিশীলতা রক্ষা করা যায়।
👉সংবিধান কি এবং এর উদ্দেশ্য (Objectives) কি?
সংবিধান হল একটি সামাজিক, ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দল । সংবিধানের উদ্দেশ্য হল সমাজের সমস্যাসমূহের সমাধান এবং তার সামগ্রিক উন্নতি।
👉ভারতীয় সংবিধানের ৬ষ্ঠ সংবিধান সংশােধনঃ
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় সংবিধানের ৬ষ্ঠ সংবিধান সংশােধনী আইনটি প্রণীত হয়। এই সংশােধনের মাধ্যমে ২৬৯ ও ২৮৬ নং ধারার পরিবর্তন করা হয়। এছাড়াও
কেন্দ্রীয় তালিকা ও রাজ্য তালিকার কিছু পরিবর্তন করা হয়।